ঢাকা ১০:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ভোলার সাবেক এমপি মুকুলের বিরুদ্ধে মামলা করলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা Logo ময়মনসিংহের সিএনজি অটোরিকশা চোরচক্রের ৬ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার… Logo গাজীপুরে বিসিএস আনসার কর্মকর্তা ও রিক্রুট সিপাহিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত Logo ময়মনসিংহের ভালুকায় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-রাব্বানী ,সম্পাদক-আমির হোসেন। Logo ঢাকায় শিক্ষা ভবনে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে লক্ষীপুরে শিক্ষকদের মানববন্ধন Logo ময়মনসিংহ টু ত্রিশাল অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সার দাপট… Logo শ্রেণি পাঠদানে প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠ পরিকল্পনার অপরিহার্যতা Logo বাগমারায় শাহ সিমেন্টের পক্ষ থেকে নির্মাণ সাথী প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত Logo প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্কের গুরুত্ব Logo শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে সমাবেশ প্রতিবাদ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

শূণ্য থেকে স্বাবলম্বী ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীনের সংগ্রামী জীবন

হাজী কাউছার
  • আপডেট সময় : ১০:৫১:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪ ২২৮ বার পড়া হয়েছে

হাজী কাউছার নবীনগর,(ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি
নাজিম উদ্দীন (৩৯)। ফুটপাতে ১০ টাকা বেতনে চাকরি করা নাজিম উদ্দীন এখন নবীনগর বাজারের একজন স্বাবলম্বী ব্যবসায়ী। শখের রাধুনি। বাড়িতে করেছেন হাঁস-মুরগির ছোট্ট খামার। বাবা আব্দুর রহমান যিনি ধানের বেপারি রহমান নামে এলাকার পরিচিত মুখ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার আলীয়াবাদ গ্রামের সন্তান তিনি। নাজিম উদ্দীন ২ বোনের মধ্যে ছোট ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে বড় ছেলে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ঢাকার একটি বেকারিতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। নাম মাত্র বেতন আর পেটে-ভাতে থাকা!

বাবার ধানের ব্যবসায় মন্দা আর এক মৌসুমের কারবারে হিমশিম খাওয়া পরিবারের হাল ধরতে পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে জীবন সংগ্রামে আজ মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। বাবার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দেড় শতক বসত-ভিটা আর বোনদের বিয়ে সব কিছুই যেনো অতিরিক্ত চাপ। বাবার স্বল্প পূজিতে কোন রকমে চলতো সংসার।

জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ঢাকা থেকে ফিরে নাজিম উদ্দিন তার ছোট ভাই যেখানে কাজ করতে সেখানে তার ভাইয়ের বদলে নিজেই শুরু করেন ১০ টাকা বেতনের চাকরি। ফুটপাতের দোকান। কখনো জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর উত্তর পাশের কোনায়, কখনো সমবায় মার্কেটের সামনে আবার কখনো জেলা পরিষদ মার্কেটের পিছনে। এভাবেই দীর্ঘ দিন চলছিল তার ব্যবসায়ীক জীবন।

দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি করতেন সদাই-পাতি। এখন দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। জেলা পরিষদ ডাক বাংলো মার্কেটে নিজের দোকানের পাশাপাশি ছোট ভাই মোহাম্মদ আলীর জন্য করেছেন স্পিড বোটঘাট সংলগ্ন ইসলাম মার্কেটে আরেকটি ভ্যারাইটিজ দোকান। বাহারী ভোগ্য পণ্য, কসমেটিকস, জনপ্রিয় পানীয় দেদারসে হয় বিক্রি।

নাজিম উদ্দীন জানান, আব্বার অল্প পূঁজিতে লাভও অল্প হতো, তাও এক সিজনে। জমি বলতে ছিল আমাদের দেড় শতক বাড়ির জায়গা। ১৪ বছর বয়সে ১০ টাকা বেতনে পান-সিগারেটের ভাসমান দোকানে চাকরি করি। আল্লাহর রহমতে আম্মা-আব্বার দোয়ায় এখন আমরা ২ দোকানের মালিক। দেড় শতক জায়গা দিয়ে আমাদের তিন ভাইয়ের সংসার চলতো না এখন ১৫ শতক জমি কিনে বাড়ি করেছি। পত্তন-বর্গা নিয়ে ঘরের খোরাকি ফসলও করি।

চেষ্টা থাকলে উপায় হয়। আমাকে অনেকেই বুদ্ধি দিয়ে, অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে সব সময়। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রথমে অন্যের ভাসমান দোকানে থাকলেও নিজেই শুরু করি ব্যবসা। আমি যখন ফুটপাতে ব্যবসা করি তখন সর্ব সাকুল্যে পূঁজি ছিল ৯৩৫ টাকা। আমার বোন রিজিয়ার বিয়ে হয়েছিল চট্টগ্রামে। তার স্বামীর নাম মহসিন। দুলা ভাই আর বোন বেশির ভাগ আমাকে অনুপ্রেরণা দিতো। যখন নতুন কোন দোকান নিই, ব্যবসা শুরু করি তখন তারা আমাকে সাহায্য করতে ছুটে আসতো। তাদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না।

আব্বা প্রতিদিন আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য দুপুরে খাবার নিয়ে আসে দোকানে। এর চেয়ে শান্তি আর কি আছে! হয়তো অনেকের কাছে আমি এখনো ছোট ব্যবসায়ী হতে পারি কিন্তু পুঁজি ছাড়া এ পর্যন্ত আসা অনেক কষ্টের, যা আমি কাউকে বুঝাতে পারবো না। যা পেয়েছি, আল্লাহর কাছে ইয়ানাফসি!

২০০৮ সালে আমি বিয়ে করি। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। নতুন বউ, কেমন জানি হয়। এখন বরং ভাবি, একজন ভালো মানুষ সঙ্গী পেয়েছি। আমার বোনরা মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসে, সবাই মিলে এক সাথে থাকি। ভালো লাগে।

স্বল্প ভাষী, মিশুক নাজিম উদ্দীন। ৪ কন্যা সন্তানের জনক। স্বপ্ন দেখেন মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি ও বিয়ে-সাদির। গোপনে সাধ্য মতন চেষ্টা করেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। দোকানে আসা ভিক্ষুকদের জন্য আলাদা করে প্রতিদিন রেখে দেন ভাংতি টাকা। সবার সাথে হাসি-খুশি কথা বলা সাদাসিধে মানুষটি সকলের দোয়া চান।

ট্যাগস :
Translate »

শূণ্য থেকে স্বাবলম্বী ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীনের সংগ্রামী জীবন

আপডেট সময় : ১০:৫১:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪

হাজী কাউছার নবীনগর,(ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি
নাজিম উদ্দীন (৩৯)। ফুটপাতে ১০ টাকা বেতনে চাকরি করা নাজিম উদ্দীন এখন নবীনগর বাজারের একজন স্বাবলম্বী ব্যবসায়ী। শখের রাধুনি। বাড়িতে করেছেন হাঁস-মুরগির ছোট্ট খামার। বাবা আব্দুর রহমান যিনি ধানের বেপারি রহমান নামে এলাকার পরিচিত মুখ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার আলীয়াবাদ গ্রামের সন্তান তিনি। নাজিম উদ্দীন ২ বোনের মধ্যে ছোট ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে বড় ছেলে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ঢাকার একটি বেকারিতে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। নাম মাত্র বেতন আর পেটে-ভাতে থাকা!

বাবার ধানের ব্যবসায় মন্দা আর এক মৌসুমের কারবারে হিমশিম খাওয়া পরিবারের হাল ধরতে পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে জীবন সংগ্রামে আজ মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। বাবার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দেড় শতক বসত-ভিটা আর বোনদের বিয়ে সব কিছুই যেনো অতিরিক্ত চাপ। বাবার স্বল্প পূজিতে কোন রকমে চলতো সংসার।

জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ঢাকা থেকে ফিরে নাজিম উদ্দিন তার ছোট ভাই যেখানে কাজ করতে সেখানে তার ভাইয়ের বদলে নিজেই শুরু করেন ১০ টাকা বেতনের চাকরি। ফুটপাতের দোকান। কখনো জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর উত্তর পাশের কোনায়, কখনো সমবায় মার্কেটের সামনে আবার কখনো জেলা পরিষদ মার্কেটের পিছনে। এভাবেই দীর্ঘ দিন চলছিল তার ব্যবসায়ীক জীবন।

দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি করতেন সদাই-পাতি। এখন দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। জেলা পরিষদ ডাক বাংলো মার্কেটে নিজের দোকানের পাশাপাশি ছোট ভাই মোহাম্মদ আলীর জন্য করেছেন স্পিড বোটঘাট সংলগ্ন ইসলাম মার্কেটে আরেকটি ভ্যারাইটিজ দোকান। বাহারী ভোগ্য পণ্য, কসমেটিকস, জনপ্রিয় পানীয় দেদারসে হয় বিক্রি।

নাজিম উদ্দীন জানান, আব্বার অল্প পূঁজিতে লাভও অল্প হতো, তাও এক সিজনে। জমি বলতে ছিল আমাদের দেড় শতক বাড়ির জায়গা। ১৪ বছর বয়সে ১০ টাকা বেতনে পান-সিগারেটের ভাসমান দোকানে চাকরি করি। আল্লাহর রহমতে আম্মা-আব্বার দোয়ায় এখন আমরা ২ দোকানের মালিক। দেড় শতক জায়গা দিয়ে আমাদের তিন ভাইয়ের সংসার চলতো না এখন ১৫ শতক জমি কিনে বাড়ি করেছি। পত্তন-বর্গা নিয়ে ঘরের খোরাকি ফসলও করি।

চেষ্টা থাকলে উপায় হয়। আমাকে অনেকেই বুদ্ধি দিয়ে, অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে সব সময়। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রথমে অন্যের ভাসমান দোকানে থাকলেও নিজেই শুরু করি ব্যবসা। আমি যখন ফুটপাতে ব্যবসা করি তখন সর্ব সাকুল্যে পূঁজি ছিল ৯৩৫ টাকা। আমার বোন রিজিয়ার বিয়ে হয়েছিল চট্টগ্রামে। তার স্বামীর নাম মহসিন। দুলা ভাই আর বোন বেশির ভাগ আমাকে অনুপ্রেরণা দিতো। যখন নতুন কোন দোকান নিই, ব্যবসা শুরু করি তখন তারা আমাকে সাহায্য করতে ছুটে আসতো। তাদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না।

আব্বা প্রতিদিন আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য দুপুরে খাবার নিয়ে আসে দোকানে। এর চেয়ে শান্তি আর কি আছে! হয়তো অনেকের কাছে আমি এখনো ছোট ব্যবসায়ী হতে পারি কিন্তু পুঁজি ছাড়া এ পর্যন্ত আসা অনেক কষ্টের, যা আমি কাউকে বুঝাতে পারবো না। যা পেয়েছি, আল্লাহর কাছে ইয়ানাফসি!

২০০৮ সালে আমি বিয়ে করি। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। নতুন বউ, কেমন জানি হয়। এখন বরং ভাবি, একজন ভালো মানুষ সঙ্গী পেয়েছি। আমার বোনরা মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসে, সবাই মিলে এক সাথে থাকি। ভালো লাগে।

স্বল্প ভাষী, মিশুক নাজিম উদ্দীন। ৪ কন্যা সন্তানের জনক। স্বপ্ন দেখেন মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি ও বিয়ে-সাদির। গোপনে সাধ্য মতন চেষ্টা করেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। দোকানে আসা ভিক্ষুকদের জন্য আলাদা করে প্রতিদিন রেখে দেন ভাংতি টাকা। সবার সাথে হাসি-খুশি কথা বলা সাদাসিধে মানুষটি সকলের দোয়া চান।