ঢাকা ১০:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ভোলার সাবেক এমপি মুকুলের বিরুদ্ধে মামলা করলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা Logo ময়মনসিংহের সিএনজি অটোরিকশা চোরচক্রের ৬ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার… Logo গাজীপুরে বিসিএস আনসার কর্মকর্তা ও রিক্রুট সিপাহিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত Logo ময়মনসিংহের ভালুকায় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-রাব্বানী ,সম্পাদক-আমির হোসেন। Logo ঢাকায় শিক্ষা ভবনে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে লক্ষীপুরে শিক্ষকদের মানববন্ধন Logo ময়মনসিংহ টু ত্রিশাল অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সার দাপট… Logo শ্রেণি পাঠদানে প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠ পরিকল্পনার অপরিহার্যতা Logo বাগমারায় শাহ সিমেন্টের পক্ষ থেকে নির্মাণ সাথী প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত Logo প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্কের গুরুত্ব Logo শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে সমাবেশ প্রতিবাদ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

আসলে প্রেস কাউন্সিলের কাজটা কী ?

বর্তমান সংবাদ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪২:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩ ৬৫ বার পড়া হয়েছে

সংবাদপত্র বা সাংবাদিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় দেখা যায় না কেন? আসলে প্রেস কাউন্সিলের কাজটা কী? এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, আসলে যে কারণে প্রেস কাউন্সিলের জন্ম হয়েছে, সেটাই মূলত প্রেস কাউন্সিলের কাজ৷

আসলে জন্মের লাইনটা আমাদের সাধারণত জানা উচিত যে, বাংলাদেশে প্রেসের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রেস কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন৷ এটাই আইনের প্রথম কথা এবং এটাই মূলত কাজ৷

প্রেস কাউন্সিল শুধু অভিযোগের নিস্পত্তি করে। কোনো সাংবাদিক হয়রানির শিকার হলে, মিথ্যা মামলার শিকার হলে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হলে প্রেস কাউন্সিল কোনো ব্যবস্থা নেয় কিনা জানতে চাইলে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, আইনে এইসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কোনো ক্ষমতা বা এখতিয়ার আমাদের নেই। আমরা শুধু সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে তার নিস্পত্তি করে থাকি বা এর সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করি।

কোনো সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যম হয়রানি ও মিথ্যা মামলার শিকার হলে সে বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, তার কোনো বিধান প্রেস কাউন্সিল আইনে নাই। তাহলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংরক্ষণ বা সুরক্ষা কীভাবে করে প্রেস কাউন্সিল? এর জবাবে তিনি বলেন, আইনে যেটুকু আছে সেটুকু করি। মামলাগুলো স্বাধীনভাবে নিস্পত্তি করি।

প্রেস কাউন্সিল বিষয়ক আইন করা হয় ১৯৭৪ সালে। তবে প্রেস কাউন্সিল গঠন করা হয় ১৯৭৯ সালে। এটি একটি কোয়াসি জুডিশিয়াল বডি। কাউন্সিলে একজন চেয়ারম্যান ও ১৪ জন সদস্য আছেন। তারা দুই বছরের জন্য মনোনীত হন। একটি আপিল ট্রাইব্যুনালও আছে প্রেস কাউন্সিলের।

প্রেস কাউন্সিলের সদস্য এবং দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ১৯৭৪ সালে যখন আইনটি করা হয় তখন প্রেক্ষাপট ছিল সম্পুর্ন ভিন্ন। তখন কোনো সংবাদপত্র বা সাংবাদিককে ভর্ৎসনা করাই ছিল যথেষ্ট। এটাই অনেক বড় শাস্তি ছিল। কিন্তু এখন এটা এখন আর কেউ গুরুত্ব দেয় না। তাই অনেকেই প্রেস কাউন্সিলে মামলা করতে চায় না,প্রয়োজনে আসতেও চান না। তাই আমরা শুধু ভর্ৎসনা আর ভুল স্বীকার নয়, জরিমানার বিধান রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছি। ভুল শিকার করে প্রতিবেদন সংশোধনের আগ পর্যন্ত জরিমানা বাড়তেই থাকবে।

সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিকার পাওয়ার কোনো বিধান প্রেস কাউন্সিল আইনে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,এখন পর্যন্ত কোনো সংবাদপত্র বা সাংবাদিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বা অন্য কোনো চাপে আছেন এরকম কোনো আবেদনের নজীর নাই। তবে এরকম অভিযোগ আসলে আমরা সেটা শুনব বা শুনতে পারবো।

আর ডিসিরা যদি কোনো সংবাদপত্রের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করে দেন, তাহলে আমাদের আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যায়। এরকম ডিক্লারেশন বাতিল হওয়া সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। সেই পত্রিকাগুলো এখনও চলছে,” বলেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

তাহলে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে কে? এ প্রসঙ্গে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা যেমন জরুরি, তেমনি তাদের পেশাদারিত্ব ও গ্রহণযোগ্যতাও জরুরি। আমরা তাই সাংবাদিকদের একটি ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। সেখানে সাংবাদিকদের তালিকাভুক্ত করবো। আমরা পরিচয়পত্র দেবো। তাহলে তাদের নিয়ে কাজ করতে আমাদের সুবিধা হবে। এখন অনেক ভুঁইফোড় সংবাদপত্র ও সাংবাদিক আছে, তারা সুনাম নষ্ট করছে।

তার কথা, আইনজীবী ও চিকিৎসকদের এনরোলমেন্টের বিধান আছে। বেসরকারি শিক্ষকদের নিবন্ধন পরীক্ষা আছে। আমরা সেরকমও একটা কিছু করতে চাই। তা করতে হলে সরকারকে আইন করতে হবে। সেটা করা গেলে মালিক পক্ষ ইচ্ছে করলেই যে কাউকে ধরে সাংবাদিক বানাতে পারবে না। যে কেউ সম্পাদক হতে পারবে না।

প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, এখন অনেকেই বলছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ যেন প্রেস কাউন্সিলে হয়, প্রেস কাউন্সিলই সিদ্ধান্ত নেবে ওই অভিযোগ নিস্পত্তিতে ফৌজদারি কোনো মামলার দরকার আছে কিনা। তবে এটা করতে হলে প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা যদি জামিনযোগ্য হতো তাহলে এর অপব্যবহার কমতো, সাংবাদিকরও হয়রানির শিকার হতো না।
তবে ইকবাল সোবহান চৌধুরী মনে করেন, অন্য কোনো আইনে মামলা করা যাবে না বা প্রেস কাউন্সিলের অনুমতি নিতে হবে- এটা বললে দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হবে। আমরা যেটা বলছি, সেটা হলো, মামলা করেই গ্রেপ্তার নয়, আদালত সমন দেবেন। সমনে হাজির না হলে আদলত ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন। এটা হলে হয়রানি অনেক কমতো। আর আমরা সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইনের দাবিও করেছি।

ডিজিটাল আইনে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার এবং সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালত তো এখন তাদের জামিন দিলো। যদি জামিনই দিলো তাহলে আগে কেন ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হলো না?

আমরা এটাই চাই। গ্রেপ্তার নয়, আগে সমন দিয়ে আদালতে হাজির হতে বলা হোক। এই সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে রাত চারটার সময় কেন গ্রেপ্তার করা হলো?

সে তো কোনো ক্রিমিনাল না যে রাতে না ধরলে পালিয়ে যাবে। এটাই হলো আইনের অপপ্রয়োগ। এতে সরকারেরও সুনাম ক্ষুন্ন হয়।

প্রেস কাউন্সিল গত সাল ২০২২ সালে তিনটি মামলা ও দুইটি আপিলের নিস্পত্তি করেছে। এই সময়ে ১২টি কর্মশালা ও আটটি সেমিনারও করেছে তারা। এর আগে ২০২১ সালে ছয়টি মামলা ও একটি আপিল নিস্পত্তি করেছে, কর্মশালা করেছে ১২টি, সেমিনার করেছে আটটি।

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন,আমাদের আইন যেটুকু ক্ষমতা দিয়েছে আমরা তার বাইরে কিছু করতে পারি না। কোনো সাংবাদিক হয়রানির শিকার হলে বা কোনো সংবাদপত্র অন্যায়ভাবে চাপে পড়লে আমরা তো কিছু করতে পারি না।

আর সেই কারণে প্রতিকার চাইতেও আমাদের কাছে কেউ আসেন না। তবে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমরা অভিযোগ নিতে পারি, নিস্পত্তি করতে পারি। তবে এই অভিযোগও কম আসে । কারণ, অনেকেই কড়া প্রতিকার পেতে অন্য আইনে থানায় বা আদালতে মামলা করেন।

তবে আমি মনে করি, প্রেস কাউন্সিলকে একটি ক্ষমতা দেয়া উচিত, তা হলো, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে, সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ এখানে করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলই সিদ্ধান্ত দেবে মামলাটি কোন আইনে হতে পারে। অন্য কোনো আদালতে হবে কিনা এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটা হলে ভালো হবে। হয়রানি বন্ধ হবে। আমরা তখন সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে পারবো। প্রয়োজনে এটার জন্য আলাদা একটি বডিও হতে পারে, এই বিষয়ে অভিমত বিচারপতি নাসিমের।

প্রেসকাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নাও একই ধরনের কথা বলেন,যে,, কোনো সাংবাদিক বা সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে যদি ডিজিটাল আইনে মামলা করতেই হয়, তাহলে সেটা আগে প্রেস কাউন্সিলে পাঠাতে হবে। তারা ভেরিফাই করে দেখবে যে মামলাটি ওই আইনে দায়ের করার যোগ্য কিনা। তারাই সমাধান দেবে। তারা একটি কোয়াসি জুডিশিয়াল বডি, তাদের ট্রাইব্যুনাল আছে। তারা এটা করতে পারবে। আইনের সামান্য সংশোধন করেই এই দায়িত্ব তাদের দেয়া যায়। তাহলে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা ও সুরক্ষায়ও তারা ভূমিকা রাখতে পারবে।

তিনি বলেন, আইনটি হয় ১৯৭৪ সালে। তখনকার এবং এখনকার প্রেক্ষাপট এক নয়। তখন পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থার জন্য আইনটি করা হয়। এখন তো আরো অনেক ধরনের সংবাদমাধ্যম এসেছে। সেই বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। আর মামলা হলেই কেন গ্রেপ্তার? জামিন কেন দেয়া যবে না। জামিন অযোগ্য মামলায়ও বিচারক চাইলে জামিন দিতে পারেন। সেটাও তাদের দেখার বিষয়।

তার কথা, সাংবাদিকদের জন্য কোনো আলাদা সুরক্ষা আইন নয়, সুরক্ষা সবার জন্য, দেশের সব নাগরিকের জন্য। সংবিধান এই সুরক্ষার কথা বলেছে। সেটাই বাস্তবে দেখাতে হবে।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রেস কাউন্সিল দন্তহীন, তাকে দন্ত দিতে হবে। তাহলে এখন অল্প লোক সেখানে প্রতিকারের জন্য গেলেও তখন বেশি লোক যাবেন। তখনই প্রতিকারপ্রার্থী সবার জন্য কাজ করতে পারবে।

Translate »

আসলে প্রেস কাউন্সিলের কাজটা কী ?

আপডেট সময় : ০১:৪২:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩

সংবাদপত্র বা সাংবাদিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় দেখা যায় না কেন? আসলে প্রেস কাউন্সিলের কাজটা কী? এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, আসলে যে কারণে প্রেস কাউন্সিলের জন্ম হয়েছে, সেটাই মূলত প্রেস কাউন্সিলের কাজ৷

আসলে জন্মের লাইনটা আমাদের সাধারণত জানা উচিত যে, বাংলাদেশে প্রেসের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রেস কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন৷ এটাই আইনের প্রথম কথা এবং এটাই মূলত কাজ৷

প্রেস কাউন্সিল শুধু অভিযোগের নিস্পত্তি করে। কোনো সাংবাদিক হয়রানির শিকার হলে, মিথ্যা মামলার শিকার হলে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হলে প্রেস কাউন্সিল কোনো ব্যবস্থা নেয় কিনা জানতে চাইলে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, আইনে এইসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কোনো ক্ষমতা বা এখতিয়ার আমাদের নেই। আমরা শুধু সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে তার নিস্পত্তি করে থাকি বা এর সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করি।

কোনো সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যম হয়রানি ও মিথ্যা মামলার শিকার হলে সে বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, তার কোনো বিধান প্রেস কাউন্সিল আইনে নাই। তাহলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংরক্ষণ বা সুরক্ষা কীভাবে করে প্রেস কাউন্সিল? এর জবাবে তিনি বলেন, আইনে যেটুকু আছে সেটুকু করি। মামলাগুলো স্বাধীনভাবে নিস্পত্তি করি।

প্রেস কাউন্সিল বিষয়ক আইন করা হয় ১৯৭৪ সালে। তবে প্রেস কাউন্সিল গঠন করা হয় ১৯৭৯ সালে। এটি একটি কোয়াসি জুডিশিয়াল বডি। কাউন্সিলে একজন চেয়ারম্যান ও ১৪ জন সদস্য আছেন। তারা দুই বছরের জন্য মনোনীত হন। একটি আপিল ট্রাইব্যুনালও আছে প্রেস কাউন্সিলের।

প্রেস কাউন্সিলের সদস্য এবং দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ১৯৭৪ সালে যখন আইনটি করা হয় তখন প্রেক্ষাপট ছিল সম্পুর্ন ভিন্ন। তখন কোনো সংবাদপত্র বা সাংবাদিককে ভর্ৎসনা করাই ছিল যথেষ্ট। এটাই অনেক বড় শাস্তি ছিল। কিন্তু এখন এটা এখন আর কেউ গুরুত্ব দেয় না। তাই অনেকেই প্রেস কাউন্সিলে মামলা করতে চায় না,প্রয়োজনে আসতেও চান না। তাই আমরা শুধু ভর্ৎসনা আর ভুল স্বীকার নয়, জরিমানার বিধান রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছি। ভুল শিকার করে প্রতিবেদন সংশোধনের আগ পর্যন্ত জরিমানা বাড়তেই থাকবে।

সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিকার পাওয়ার কোনো বিধান প্রেস কাউন্সিল আইনে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,এখন পর্যন্ত কোনো সংবাদপত্র বা সাংবাদিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বা অন্য কোনো চাপে আছেন এরকম কোনো আবেদনের নজীর নাই। তবে এরকম অভিযোগ আসলে আমরা সেটা শুনব বা শুনতে পারবো।

আর ডিসিরা যদি কোনো সংবাদপত্রের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করে দেন, তাহলে আমাদের আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যায়। এরকম ডিক্লারেশন বাতিল হওয়া সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। সেই পত্রিকাগুলো এখনও চলছে,” বলেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

তাহলে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে কে? এ প্রসঙ্গে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা যেমন জরুরি, তেমনি তাদের পেশাদারিত্ব ও গ্রহণযোগ্যতাও জরুরি। আমরা তাই সাংবাদিকদের একটি ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। সেখানে সাংবাদিকদের তালিকাভুক্ত করবো। আমরা পরিচয়পত্র দেবো। তাহলে তাদের নিয়ে কাজ করতে আমাদের সুবিধা হবে। এখন অনেক ভুঁইফোড় সংবাদপত্র ও সাংবাদিক আছে, তারা সুনাম নষ্ট করছে।

তার কথা, আইনজীবী ও চিকিৎসকদের এনরোলমেন্টের বিধান আছে। বেসরকারি শিক্ষকদের নিবন্ধন পরীক্ষা আছে। আমরা সেরকমও একটা কিছু করতে চাই। তা করতে হলে সরকারকে আইন করতে হবে। সেটা করা গেলে মালিক পক্ষ ইচ্ছে করলেই যে কাউকে ধরে সাংবাদিক বানাতে পারবে না। যে কেউ সম্পাদক হতে পারবে না।

প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, এখন অনেকেই বলছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ যেন প্রেস কাউন্সিলে হয়, প্রেস কাউন্সিলই সিদ্ধান্ত নেবে ওই অভিযোগ নিস্পত্তিতে ফৌজদারি কোনো মামলার দরকার আছে কিনা। তবে এটা করতে হলে প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা যদি জামিনযোগ্য হতো তাহলে এর অপব্যবহার কমতো, সাংবাদিকরও হয়রানির শিকার হতো না।
তবে ইকবাল সোবহান চৌধুরী মনে করেন, অন্য কোনো আইনে মামলা করা যাবে না বা প্রেস কাউন্সিলের অনুমতি নিতে হবে- এটা বললে দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হবে। আমরা যেটা বলছি, সেটা হলো, মামলা করেই গ্রেপ্তার নয়, আদালত সমন দেবেন। সমনে হাজির না হলে আদলত ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন। এটা হলে হয়রানি অনেক কমতো। আর আমরা সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইনের দাবিও করেছি।

ডিজিটাল আইনে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার এবং সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালত তো এখন তাদের জামিন দিলো। যদি জামিনই দিলো তাহলে আগে কেন ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হলো না?

আমরা এটাই চাই। গ্রেপ্তার নয়, আগে সমন দিয়ে আদালতে হাজির হতে বলা হোক। এই সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে রাত চারটার সময় কেন গ্রেপ্তার করা হলো?

সে তো কোনো ক্রিমিনাল না যে রাতে না ধরলে পালিয়ে যাবে। এটাই হলো আইনের অপপ্রয়োগ। এতে সরকারেরও সুনাম ক্ষুন্ন হয়।

প্রেস কাউন্সিল গত সাল ২০২২ সালে তিনটি মামলা ও দুইটি আপিলের নিস্পত্তি করেছে। এই সময়ে ১২টি কর্মশালা ও আটটি সেমিনারও করেছে তারা। এর আগে ২০২১ সালে ছয়টি মামলা ও একটি আপিল নিস্পত্তি করেছে, কর্মশালা করেছে ১২টি, সেমিনার করেছে আটটি।

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন,আমাদের আইন যেটুকু ক্ষমতা দিয়েছে আমরা তার বাইরে কিছু করতে পারি না। কোনো সাংবাদিক হয়রানির শিকার হলে বা কোনো সংবাদপত্র অন্যায়ভাবে চাপে পড়লে আমরা তো কিছু করতে পারি না।

আর সেই কারণে প্রতিকার চাইতেও আমাদের কাছে কেউ আসেন না। তবে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমরা অভিযোগ নিতে পারি, নিস্পত্তি করতে পারি। তবে এই অভিযোগও কম আসে । কারণ, অনেকেই কড়া প্রতিকার পেতে অন্য আইনে থানায় বা আদালতে মামলা করেন।

তবে আমি মনে করি, প্রেস কাউন্সিলকে একটি ক্ষমতা দেয়া উচিত, তা হলো, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে, সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ এখানে করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলই সিদ্ধান্ত দেবে মামলাটি কোন আইনে হতে পারে। অন্য কোনো আদালতে হবে কিনা এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটা হলে ভালো হবে। হয়রানি বন্ধ হবে। আমরা তখন সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে পারবো। প্রয়োজনে এটার জন্য আলাদা একটি বডিও হতে পারে, এই বিষয়ে অভিমত বিচারপতি নাসিমের।

প্রেসকাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নাও একই ধরনের কথা বলেন,যে,, কোনো সাংবাদিক বা সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে যদি ডিজিটাল আইনে মামলা করতেই হয়, তাহলে সেটা আগে প্রেস কাউন্সিলে পাঠাতে হবে। তারা ভেরিফাই করে দেখবে যে মামলাটি ওই আইনে দায়ের করার যোগ্য কিনা। তারাই সমাধান দেবে। তারা একটি কোয়াসি জুডিশিয়াল বডি, তাদের ট্রাইব্যুনাল আছে। তারা এটা করতে পারবে। আইনের সামান্য সংশোধন করেই এই দায়িত্ব তাদের দেয়া যায়। তাহলে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা ও সুরক্ষায়ও তারা ভূমিকা রাখতে পারবে।

তিনি বলেন, আইনটি হয় ১৯৭৪ সালে। তখনকার এবং এখনকার প্রেক্ষাপট এক নয়। তখন পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থার জন্য আইনটি করা হয়। এখন তো আরো অনেক ধরনের সংবাদমাধ্যম এসেছে। সেই বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। আর মামলা হলেই কেন গ্রেপ্তার? জামিন কেন দেয়া যবে না। জামিন অযোগ্য মামলায়ও বিচারক চাইলে জামিন দিতে পারেন। সেটাও তাদের দেখার বিষয়।

তার কথা, সাংবাদিকদের জন্য কোনো আলাদা সুরক্ষা আইন নয়, সুরক্ষা সবার জন্য, দেশের সব নাগরিকের জন্য। সংবিধান এই সুরক্ষার কথা বলেছে। সেটাই বাস্তবে দেখাতে হবে।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রেস কাউন্সিল দন্তহীন, তাকে দন্ত দিতে হবে। তাহলে এখন অল্প লোক সেখানে প্রতিকারের জন্য গেলেও তখন বেশি লোক যাবেন। তখনই প্রতিকারপ্রার্থী সবার জন্য কাজ করতে পারবে।