ঢাকা ০৬:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মাঝে বাইসাইকেল ও শিক্ষা বৃত্তির চেক প্রদান Logo ।ফটিকছড়ির নাজিরহাট বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা Logo পলাশবাড়ীতে যুবদলের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo লক্ষীপুরে দুর্বৃত্তের হাত থাকে স্বামীকে বাচাতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গৃহবধূ নিহত Logo বাতিল হচ্ছে জাতীয় ৮ দিবস Logo গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় গাজীপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে নালিশি জমিতে ১৪৪ ধারা জারী Logo ডাবল গরু ফুটবল টুর্নামেন্টে জগদলকে ট্রাইবেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন শাইখ স্পোর্টস বিরামপুর  Logo সুন্দরগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত  উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর মতবিনিময় সভা Logo চট্টগ্রাম বোয়াল খালিতে গৃহবধূ লিজাকে পরিকল্পিত হত্যা ও হত্যাকারিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল Logo সুন্দরগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত  উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর মতবিনিময় সভা

বিশ্ব বসতি দিবস আজ নগরায়ণের সবচেয়ে বড় চাপ ঢাকায়, বাংলাদেশ এগিয়েছে কতোটা?

মোঃ হাসানুজ্জামান : সিনিয়র রিপোর্টার :
  • আপডেট সময় : ০১:২১:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩ ৯৯ বার পড়া হয়েছে

মোঃ হাসানুজ্জামান : সিনিয়র রিপোর্টার : সবার জন্য নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আজ সোমবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ পালিত হচ্ছে। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ দিবস পালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’।দিবসটি উপলক্ষ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা রয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ অনেকেই পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সামগ্রিক অবস্থানে বাংলাদেশ কোথায়? সবার জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রকল্প এরইমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যাদের ঘর ছিলো না, ভিটেমাটি ছিলো না, তারাও ঘর পেয়েছেন। পেয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই।

এরইমধ্যে দেশের ২১ জেলা ও ৩৩৪ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা হয়েছে। এই অর্জনকে একটি বড় মাইলফলক হিসাবে বলা হয়ে থাকে। আর এভাবেই বাংলাদেশ গৃহহীন মুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী:

বসতি দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “দেশের গৃহহীন-ভূমিহীনদের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশে আর কোন গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদের আলোকে নগর ও গ্রাম অঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে আমাদের সরকার নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।”

তিনি বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জনসাধারণের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন; যাতে দেশের সকল মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় এবং একইসঙ্গে নগর ও গ্রামাঞ্চলের সুষম উন্নয়ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার নগরগুলোকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।’

শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ হতে ২৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা শিগগিরই ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপসমূহ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা ভিশন ২০৪১ ঘোষণা করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। বাস্তবায়িত হবে জাতির পিতার আজীবন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’।”

প্রেক্ষাপট:

ইতিহাস থেকে জানা যায়, সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করাসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশে সোমবার (২ অক্টোবর) দিবসটি পালিত হচ্ছে।

এবারের প্রতিপাদ্য:

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

মুজিব শতবর্ষে ঘর প্রদান:

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেন দেশে একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। এরই অংশ হিসাবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় ২ লাখ ৩৮হাজার ৮৫১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। সবশেষ আগস্টে আরও ২২ হাজার ১০১টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে ঘরসহ বাড়ি হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দিয়ে আরও ১২টি জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়। এ নিয়ে দেশের মোট ২১টি জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়।

বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগেরই সম্প্রসারিত রুপ:

স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোয়াখালী সফরে গিয়ে আশ্রয়হীনদের প্রথম পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে আশ্রয়হীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি অর্থায়নে প্রথম উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করেন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে শেখ হাসিনা দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বাসস্থানের নিশ্চয়তার ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ ও আশ্রয়ণ প্রকল্প:

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে সর্বশেষ দেশের আরও ১২৩টি উপজেলা ও ১২ জেলাকে সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেল ৯ আগস্ট গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ২২ হাজার ১০১টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ ঘোষণা দেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২:

প্রকল্পের আওতায় ২২ হাজার ১০১টি বাড়ি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে আরও ১২টি জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত করা হয়। ৪১টি জেলার আরও ১২৩টি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়। যার ফলে মোট উপজেলার সংখ্যা হলো ৩৩৪টি এবং এই ১২টি জেলাসহ সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১টিতে।

আমরা কি সম্পূর্ণ সফল?

স্বাধীনতার এতোগুলা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। অনেক সরকার এসেছে, আবার চলে গিয়েছে। সবাই সবার যায়গা থেকে হয়তে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে দেশের সকলের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করার। কিন্তু কে কতোটা সফল হলো ?

হ্যা, সেটা একমাত্র দেশের জনগণই ভালো বলতে পারবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে কর্তাব্যক্তিরা সুদৃষ্টি দিলে যতোটা সফল হওয়ার কথা, ততোটা হয়নি। এজন্যই হয়তো এক নেতা অন্য নেতার সমালোচনা করে, গালমন্দ শুনতে হয় দেশের অসহায় ও গরীব শ্রেণির মুখে। পথশিশুদের কথা না হয় নাই…বা বললাম।

এখনো অনেক মানুষ রাস্তায় ঘুমায়:

বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এসেছে স্বাধীনতা, বাঙালি জাতি পেয়েছে লাল সবুজের পতাকা,আমরা পেয়েছি নিরাপদ একটি ভূমি। কিন্তু আমরা স্বার্থপরের মতো পথশিশু ও রাস্তায় ঘুমানো মানুষদের ভুলে গিয়েছি।

শুনতে অবাক লাগছে ?
হ্যা, অবাক লাগারই কথা। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দারপ্রান্তে। দিনে দিনে বস্তি, পথশিশু হয়তো অনেকটা কমে এসেছে। বিশেষ করে মুজিব শতবর্ষে এদেশের অনেক ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন মানুষ ঘর পেয়েছে। তাহলে এখনো কেনো মানুষ রাস্তায় ঘুমায় ? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর হয়তো কারো কাছেই নেই। কারণ সদুত্তর দেয়ার সৎ সাহসটুকুও কারো নেই। সারাদেশের আনাচে-কানাচেতে বিশেষ করে শহর অঞ্চলে তাকালেই দেখা যায় রাস্তায়, ফুটপাতে, ময়লার ভাগাড়, কারো বাসার নিচে, কোনো গ্যারেজের কোনে, ঝোপের আড়ালে পথশিশু ও আশ্রয়হীন মানুষ ঘুমিয়ে আছে।

বিশেষ করে বর্তমানে ফুট ওভার ব্রীজ অনেকের পাকাপোক্ত আবাসন হয়ে গিয়েছে। আপনি যেকোনো ফুট ওভার ব্রীজে উঠলেই এরকম শত শত দৃশ্য দেখতে পাবেন।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তাদের সাথে সঙ্গতি রেখে বিশ্ব বসতি দিবসও পালন করছি। কিন্তু দেশের সকলের জন্য একটি নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করা ও সকলের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে যদি নাই পারি, তাহলে কি প্রয়োজন এই কথিত দিবস পালনের ???

ট্যাগস :
Translate »

বিশ্ব বসতি দিবস আজ নগরায়ণের সবচেয়ে বড় চাপ ঢাকায়, বাংলাদেশ এগিয়েছে কতোটা?

আপডেট সময় : ০১:২১:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩

মোঃ হাসানুজ্জামান : সিনিয়র রিপোর্টার : সবার জন্য নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আজ সোমবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ পালিত হচ্ছে। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ দিবস পালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’।দিবসটি উপলক্ষ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা রয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ অনেকেই পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

সামগ্রিক অবস্থানে বাংলাদেশ কোথায়? সবার জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রকল্প এরইমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যাদের ঘর ছিলো না, ভিটেমাটি ছিলো না, তারাও ঘর পেয়েছেন। পেয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই।

এরইমধ্যে দেশের ২১ জেলা ও ৩৩৪ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা হয়েছে। এই অর্জনকে একটি বড় মাইলফলক হিসাবে বলা হয়ে থাকে। আর এভাবেই বাংলাদেশ গৃহহীন মুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী:

বসতি দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “দেশের গৃহহীন-ভূমিহীনদের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশে আর কোন গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদের আলোকে নগর ও গ্রাম অঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে আমাদের সরকার নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।”

তিনি বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জনসাধারণের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন; যাতে দেশের সকল মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় এবং একইসঙ্গে নগর ও গ্রামাঞ্চলের সুষম উন্নয়ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার নগরগুলোকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।’

শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ হতে ২৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা শিগগিরই ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপসমূহ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা ভিশন ২০৪১ ঘোষণা করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। বাস্তবায়িত হবে জাতির পিতার আজীবন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’।”

প্রেক্ষাপট:

ইতিহাস থেকে জানা যায়, সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করাসহ বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশে সোমবার (২ অক্টোবর) দিবসটি পালিত হচ্ছে।

এবারের প্রতিপাদ্য:

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

মুজিব শতবর্ষে ঘর প্রদান:

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেন দেশে একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। এরই অংশ হিসাবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় ২ লাখ ৩৮হাজার ৮৫১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। সবশেষ আগস্টে আরও ২২ হাজার ১০১টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে ঘরসহ বাড়ি হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দিয়ে আরও ১২টি জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়। এ নিয়ে দেশের মোট ২১টি জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়।

বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগেরই সম্প্রসারিত রুপ:

স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোয়াখালী সফরে গিয়ে আশ্রয়হীনদের প্রথম পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে আশ্রয়হীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি অর্থায়নে প্রথম উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করেন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে শেখ হাসিনা দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বাসস্থানের নিশ্চয়তার ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ ও আশ্রয়ণ প্রকল্প:

আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে সর্বশেষ দেশের আরও ১২৩টি উপজেলা ও ১২ জেলাকে সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেল ৯ আগস্ট গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ২২ হাজার ১০১টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ ঘোষণা দেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২:

প্রকল্পের আওতায় ২২ হাজার ১০১টি বাড়ি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে আরও ১২টি জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত করা হয়। ৪১টি জেলার আরও ১২৩টি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়। যার ফলে মোট উপজেলার সংখ্যা হলো ৩৩৪টি এবং এই ১২টি জেলাসহ সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১টিতে।

আমরা কি সম্পূর্ণ সফল?

স্বাধীনতার এতোগুলা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। অনেক সরকার এসেছে, আবার চলে গিয়েছে। সবাই সবার যায়গা থেকে হয়তে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে দেশের সকলের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করার। কিন্তু কে কতোটা সফল হলো ?

হ্যা, সেটা একমাত্র দেশের জনগণই ভালো বলতে পারবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে কর্তাব্যক্তিরা সুদৃষ্টি দিলে যতোটা সফল হওয়ার কথা, ততোটা হয়নি। এজন্যই হয়তো এক নেতা অন্য নেতার সমালোচনা করে, গালমন্দ শুনতে হয় দেশের অসহায় ও গরীব শ্রেণির মুখে। পথশিশুদের কথা না হয় নাই…বা বললাম।

এখনো অনেক মানুষ রাস্তায় ঘুমায়:

বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এসেছে স্বাধীনতা, বাঙালি জাতি পেয়েছে লাল সবুজের পতাকা,আমরা পেয়েছি নিরাপদ একটি ভূমি। কিন্তু আমরা স্বার্থপরের মতো পথশিশু ও রাস্তায় ঘুমানো মানুষদের ভুলে গিয়েছি।

শুনতে অবাক লাগছে ?
হ্যা, অবাক লাগারই কথা। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দারপ্রান্তে। দিনে দিনে বস্তি, পথশিশু হয়তো অনেকটা কমে এসেছে। বিশেষ করে মুজিব শতবর্ষে এদেশের অনেক ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন মানুষ ঘর পেয়েছে। তাহলে এখনো কেনো মানুষ রাস্তায় ঘুমায় ? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর হয়তো কারো কাছেই নেই। কারণ সদুত্তর দেয়ার সৎ সাহসটুকুও কারো নেই। সারাদেশের আনাচে-কানাচেতে বিশেষ করে শহর অঞ্চলে তাকালেই দেখা যায় রাস্তায়, ফুটপাতে, ময়লার ভাগাড়, কারো বাসার নিচে, কোনো গ্যারেজের কোনে, ঝোপের আড়ালে পথশিশু ও আশ্রয়হীন মানুষ ঘুমিয়ে আছে।

বিশেষ করে বর্তমানে ফুট ওভার ব্রীজ অনেকের পাকাপোক্ত আবাসন হয়ে গিয়েছে। আপনি যেকোনো ফুট ওভার ব্রীজে উঠলেই এরকম শত শত দৃশ্য দেখতে পাবেন।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তাদের সাথে সঙ্গতি রেখে বিশ্ব বসতি দিবসও পালন করছি। কিন্তু দেশের সকলের জন্য একটি নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করা ও সকলের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে যদি নাই পারি, তাহলে কি প্রয়োজন এই কথিত দিবস পালনের ???