শ্রীপুরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
- আপডেট সময় : ০৭:৫৮:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১১৫ বার পড়া হয়েছে
রেজাউল করিম হিরা
শ্রীপুর গাজীপুর প্রতিনিধি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রহমত আলীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি)। প্রয়াত এ নেতার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রয়াত নেতার ছেলে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জুম্মার নামাজের আগে ও পরে পরিবারের সদস্য ও নেতাকর্মীদের নিয়ে কবর জিয়ারত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের মধ্যদিয়ে চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।
রহমত আলী ১৯৪৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আসর আলী ও মাতা শুক্কুরজান বিবি। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। প্রয়াত নেতার বড় ছেলে ড. জাহিদ হাসান তাপস যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বিশ্ব বিজ্ঞান সমিতির সদস্য, ছোট ছেলে অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় বাবার রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয়, জেলা ও কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় রয়েছেন। উনার একমাত্র মেয়ে অধ্যাপক রুমানা আলী টুসি বাংলাদেশ কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতীমন্ত্রী।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রহমত আলী গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-কালিয়াকৈর) আসন থেকে ১৯৯১ সাল থেকে দশম সংসদ পর্যন্ত পরপর পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমৃত্যু তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সিনিয়র সদস্য ছিলেন।
প্রয়াত রহমত আলীর ছেলে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় জানান, রহমত আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১১ বছর বয়সে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৬২ সালের ১৭ এপ্রিল শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে গ্রেফতার হয়ে তিন মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৬ সালে ৭ জুন রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রেফতার হন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটারের সঙ্গে বুশ ও জি এম চ্যাটার্জির সঙ্গে সমন্বয় করে ফ্লাইট কুরিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালে ১৯ এপ্রিল ১৯ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী কৃষক লীগের নবগঠিত কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শতাধিক বস্তিবাসী পরিবারকে দিনাজপুরে পুনর্বাসিত করেন। ১৯৭৪ সালে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হন। ১৯৭৬ সালে ১০ জুলাই মতিঝিলের কমার্শিয়াল কো-অপারেটিভ ব্যাংক থেকে গ্রেফতার হন এবং ২ বছর ৮ মাস ১৭ দিন কারাভোগ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হলে তাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্যাতন করে তাঁর ১৭টি দাঁত ভেঙ্গে ফেলা হয়। ১৯৮৬ সালে কৃষক লীগের সভাপতির পদ লাভ করেন। ১৯৯০ সালে ২৯ নভেম্বর সরকারবিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হন।
আওয়ামী লীগের টিকিটে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-কালিয়াকৈর-১৯৬) সংসদীয় আসন থেকে বিপুল ভোটে পরপর পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১ সেপ্টেম্বরে স্থানীয় সরকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও ১৯৯৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের বিশেষ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।
তিনি ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।