মামুন হাসান:
ভালুকা উপজেলার সামাজিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অপরাধ ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সোচ্চার একটি নাম—‘বিউটিফুল ভালুকা’। ফেসবুকভিত্তিক এই প্ল্যাটফর্মটি সত্য প্রকাশের নির্ভীক কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত স্থানীয় জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে পেজটির সাহসী প্রতিবেদন ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য উপস্থাপন।
প্রায় ৫ বছর আগে এক অজ্ঞাতনামা প্রবাসী ‘বিউটিফুল ভালুকা’ নামে ফেসবুক পেজটি চালু করেন। প্রাথমিকভাবে এটি ভালুকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, সম্ভাবনা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরতে কাজ করলেও ধীরে ধীরে এটি সামাজিক অসঙ্গতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে শুরু করে। বর্তমানে ৭৫ হাজারের বেশি অনুসারী নিয়ে এটি ভালুকার অন্যতম জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
অপরাধীদের আতঙ্ক, সাধারণ মানুষের মুখপত্র:
ভালুকার সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, এখন ‘বিউটিফুল ভালুকা’-কে সত্যিকারের জনতার কণ্ঠস্বর হিসেবে দেখে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তথ্য প্রকাশ করা হয়।
পেজের সাথে ভালুকার বিভিন্ন গ্রামের শত শত তরুণ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত আছেন। তারা মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করে পেজটিতে পাঠান। তবে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কঠোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই তা প্রকাশ করা হয়, যা পেজটির বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এই পেজের সাহসী উদ্যোগের ফলে স্থানীয় অপরাধীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা জানে, অন্যায় করলে ‘বিউটিফুল ভালুকা’-র নজর এড়ানো কঠিন। ফলে ভালুকার অপরাধ প্রবণতাও অনেকাংশে কমে এসেছে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মানবিক কার্যক্রমেও অনন্য অবদান:
শুধু অপরাধ-দুর্নীতি প্রকাশ নয়, ‘বিউটিফুল ভালুকা’ বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। পেজটির মাধ্যমে—অসহায় ও দরিদ্রদের সহযোগিতা করা হয়। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের খুঁজে পেতে সাহায্য করা হয়। ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণা করা ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়। দুর্ঘটনা বা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো হয়।
পেজটির এসব উদ্যোগ ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনেক পরিবার নিখোঁজ স্বজনকে খুঁজে পেয়েছে এই পেজের প্রচেষ্টার ফলে। অনেক প্রতারকের কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রশাসনও পদক্ষেপ নিয়েছে ‘বিউটিফুল ভালুকা’-র প্রতিবেদন দেখে।
সত্য প্রকাশে অবিচল থাকার অঙ্গীকার :
সম্প্রতি ‘বিউটিফুল ভালুকা’ পেজ থেকে একটি পোস্ট করা হয়—”সত্য প্রকাশে অপ্রতিরুদ্ধ বিউটিফুল ভালুকা, আপনাদের মতামত জানতে চাই”—এই পোস্টের কমেন্ট বক্সে অসংখ্য মানুষ তাদের মতামত জানান। বেশিরভাগ মানুষই পেজটির সাহসী ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আরও শক্তিশালীভাবে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেজটির এক এডমিন জানান—”আমরা ভালুকার মানুষের জন্য কাজ করি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকি, কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতাও আমাদের অগ্রাধিকার। আমাদের পেজের বিরুদ্ধে অনেক হুমকি এসেছে, কিন্তু আমরা কখনোই সত্য প্রকাশ থেকে পিছপা হইনি।”
তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় সাংবাদিকরা অনেক সময় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে ভয় পান। কিন্তু আমরা ভয় পাই না। অপরাধী যত বড় শক্তিশালী হোক, ‘বিউটিফুল ভালুকা’ তার বিরুদ্ধে সত্য প্রকাশ করবেই।”
ভালুকার ভবিষ্যৎ: পরিবর্তনের পথে এগিয়ে চলা
‘বিউটিফুল ভালুকা’ এখন আর শুধু একটি ফেসবুক পেজ নয়, এটি ভালুকার পরিবর্তনের অনুঘটক হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ এখন অন্যায় দেখলে নিরব না থেকে পেজটিকে জানাচ্ছে, যা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে।
ভবিষ্যতে পেজটি আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে চায়। ভালুকাকে একটি মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করা—এটাই ‘বিউটিফুল ভালুকা’-র স্বপ্ন।
স্থানীয়রা মনে করেন, এই প্ল্যাটফর্মের সাহসী প্রতিবেদন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ভালুকাকে আরও সুন্দর ও বাসযোগ্য করে তুলবে। সত্যের পথ কখনো সহজ নয়, কিন্তু ‘বিউটিফুল ভালুকা’ প্রতিনিয়ত সেই পথেই হেঁটে চলেছে।