তমিজ উদ্দিন চৌধুরী,
স্টাফ রিপোর্টার-ফেনী।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে উত্তর ফাজিল পুর লস্কর তালুক নূরানী তালিমুল কুরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার উদ্যোগে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ থেকে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের নিয়ে র্যালী শুরু হয় এবং ফাজিলপুর ডব্লিউ বি কাদরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শেষ হয়। ফাজিলপুর ডব্লিউ বি কাদরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ মিনারে প্রধান শিক্ষক জনাব হারুন অর রশিদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সকল শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রী উপস্হিত ছিলেন। তারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং ভাষা শহীদদের সম্মান প্রদর্শন করেন। মাদ্রাসার পক্ষ থেকে কুরআন থেকে তিলাওয়াত এর মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রথমে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন মাদ্রাসার মুহতামিম জনাব মাওলানা ফয়েজ উল্ল্যা হাসান। মাঠের আনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ের হল রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ফাজিলপুর ডব্লিউ বি কাদরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব হারুন অর রশিদ ভূঁইয়া।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হল ২১শে ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ সমস্ত বাংলাভাষী অঞ্চলে পালিত একটি বিশেষ দিবস, যা ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এটি শহীদ দিবস হিসাবে ও পরিচিত। এ দিনটি বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালে এইদিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ ছাত্র শহীদ হন। যাঁদের মধ্যে রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত উল্লেখযোগ্য এবং এই কারণে এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে।
কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময় সেক্রেটারী জেনারেলের প্রধান তথ্য কর্মচারী হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের নজরে এ চিঠিটি আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন। পরে রফিক, আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে "মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড" নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। এতে একজন ইংরেজিভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টোনিভাষী, একজন কাচ্চিভাষী সদস্য ছিলেন। তারা আবারো কফি আনানকে "এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড"-এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি লেখেন, এবং চিঠির একটি কপি ইউএনওর কানাডীয় দূত ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করা হয়।
১৯৯৯ সালে তারা জোশেফের সাথে ও পরে ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন, আনা মারিয়া পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫ টি সদস্য দেশ-কানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনীত হতে হবে। তারপর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দানে ২৯টি দেশ অনুরোধ জানাতে কাজ করেন।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ। মে মাসে ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্যবিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।