ঢাকা ১২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কটিয়াদীতে উপজেলা জামায়াতের কমিটি গঠন Logo শেরপুর জেলা শ্রীবরদীতে পানিতে ডুবে যমজ দুই শিশুর মৃত্যু ঘটনা ঘটে Logo শ্রীমঙ্গলের রেলওয়ে স্টেশনে কৃষকদলের মহা সমাবেশ Logo সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মাদক সেবনের দায়ে তিনজনের কারাদণ্ড। Logo কিশোরগঞ্জে রক্ত দিয়ে গোসল করবে বলে হুমকির অভিযোগ এক যুবকের বিরুদ্ধে Logo সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করেছে সরকার। Logo দ্বীন কায়েমের জন্য দৃড় প্রতিঙ্গা ছিল আসলাম হোসাইনের  Logo ভালুকায় যুবদলের কর্মী সামাবেশ ও সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত  Logo অরুণাচলে যৌথ মহড়া নৌ ও বায়ুসেনার Logo কালিয়াকৈরে বীজ ও চারা বিনামূল্যে বিতরণ

লক্ষীপুরে দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় বাড়ছে ডায়রিয়া সহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ 

মো:আবদুল লতিফ,লক্ষীপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৭ বার পড়া হয়েছে

 

মো:আবদুল লতিফ,লক্ষীপুর প্রতিনিধি

 

ভয়াবহ দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কবলে আজও লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলার বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় পানিবন্দি বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগের প্রকোপ। এতে হাসপাতাল গুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ। শয্যা সংকটে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালবিউটামল, হিসটাসিন এন্টিবায়োটিক ও ডায়রিয়ার স্যালাইন সহ ওষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাহিরের দোকান থেকে স্যালাইনসহ ওষধ কিনতে হচ্ছে এসব সরকারি হাসপাতালের রোগীদের।

সরেজমিনে ১০০ শর্য্যার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপে তিল ধারণের জায়গা নেই। এক একটি বেডে গাদাগাদি করে তিন-চার জন করে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক রোগী বেডে জায়গা না পাওয়ায় মেঝেতেই বিছানা পেতে সারিবদ্ধ ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নার্স সংকটে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভীড় ঠেলে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ব্রাদার নোমান হোসেন বলেন, ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি রোগীই আছে ৯৫ জন। এক দুজন নার্স দিয়ে এতো গুলো রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা খুবই কষ্টকর। একজনের স্যালাইন লাগাতে গেলে-দশ জন ডাকে ঔষধ দিতে। তার উপরে স্যালাইন ও ডায়রিয়া এন্টিবায়োটিক ওষধ সংকট। এখন রোগীর স্বজনরা বাহির থেকে কিনে আনলে তাদিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি।

দুই দিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে একটি বেড ভাগ করে আরো দুই রোগীর সাথে ৭ মাসের শিশু মিরাজকে নিয়ে ভর্তি আছেন মান্দারি ইউনিয়নের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, গত ১০দিন ধরে বাড়িতে কোমর সমান পানিবন্দি আছি। টয়লেট ও ডোবার নোংরা ময়লা বন্যার পানিতে সব একাকার। এতে আমার ৭ মাসের ছেলের জ্বর, ঠাণ্ডা আর ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতালে এসে আরো বিপদে পড়েছি। শত-শত মানুষের মধ্যে থেকে সন্তানের সাথে আমরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

একই কথা বলেন পৌর শহর থেকে শিশু কন্যা তাসুকে নিয়ে ভর্তি দিনমুজুর খোকন। তিনি বলেন বন্যার পানি পচে চারদিকে ডায়রিয়াসহ নানান অসুখ দেখা দিয়েছে। আমার ১০ বছরের মেয়ের ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও স্যালাইন সহ সব ওষধই বাহিরের ফার্মেসী থেকে কিনতে হচ্ছে। কিছু বললে নার্সরা বলে ঔষধ নাই কোথা থেকে দিবো?

চর লরেন্স থেকে আসা সামছুন নাহার, সদরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে আসা ইমনসহ কয়েকজন রোগীর স্বজনরা জানান, জায়গাই পাচ্ছেন না তারা। তবুও চলাচলের স্থানে বিছানা পেতে আছে, ময়লা দূর্গন্ধ আর রোগীর ভীড়ে খুই খারাপ অবস্থা। চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। সরকারি হাসপাতালের এমন অবস্থা আগে কখনো দেখেন নি বলে অভিযোগ করেন তারা।

ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ লিলু রানী দাস বলেন, গত তিন দিনে ৩ শতাধিক ডায়রিয়া ও জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে। যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে তারা সবাই বন্যাক্রান্ত এলাকার। গত তিন দিনে গণ হারে ডায়রিয়া, জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। কোন বেডই খালি নেই, মেঝেতেও হাটার জায়গা নেই। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, হাসপাতালে,  কলেরা স্যালাইন, এন্টিবায়োটিক,সালবিউটামল, হিস্টাসিন ও ডায়রিয়ার ওষধের তীব্র সংকট। যেতুটু ছিলো সব রোগিদের সমহারে বন্টন হচ্ছে। রোগীরা এখন বাহির থেকে ঔষধ কিনতেচ্ছে। উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এদিকে জেলার ৫টি উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রে গুলোতে ডায়রিয়া, জ্বরসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেডিকেল টিমের কর্মীরা চিকিৎসা সেবা দিলেও তা অপর্যাপ্ত। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লক্ষীপুরে আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দাসহ স্থানিয়রা।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, বন্যার কারণে ডায়রিয়াসহ চারদিকে পানি বাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু থেকে আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬৪টি মেডিকেল টিমের সদস্যরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছ। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ায় কলেরার স্যালাইনসহ ওষধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্য স্যালাইনসহ ঔষধ সরবরাহ করা হলে সংকট নিরসন হবে বলেও জানান তিনি।

ট্যাগস :
Translate »

লক্ষীপুরে দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় বাড়ছে ডায়রিয়া সহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ 

আপডেট সময় : ০৯:১৮:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

মো:আবদুল লতিফ,লক্ষীপুর প্রতিনিধি

 

ভয়াবহ দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কবলে আজও লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলার বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় পানিবন্দি বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগের প্রকোপ। এতে হাসপাতাল গুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ। শয্যা সংকটে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালবিউটামল, হিসটাসিন এন্টিবায়োটিক ও ডায়রিয়ার স্যালাইন সহ ওষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাহিরের দোকান থেকে স্যালাইনসহ ওষধ কিনতে হচ্ছে এসব সরকারি হাসপাতালের রোগীদের।

সরেজমিনে ১০০ শর্য্যার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপে তিল ধারণের জায়গা নেই। এক একটি বেডে গাদাগাদি করে তিন-চার জন করে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক রোগী বেডে জায়গা না পাওয়ায় মেঝেতেই বিছানা পেতে সারিবদ্ধ ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নার্স সংকটে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভীড় ঠেলে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ব্রাদার নোমান হোসেন বলেন, ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি রোগীই আছে ৯৫ জন। এক দুজন নার্স দিয়ে এতো গুলো রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা খুবই কষ্টকর। একজনের স্যালাইন লাগাতে গেলে-দশ জন ডাকে ঔষধ দিতে। তার উপরে স্যালাইন ও ডায়রিয়া এন্টিবায়োটিক ওষধ সংকট। এখন রোগীর স্বজনরা বাহির থেকে কিনে আনলে তাদিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি।

দুই দিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে একটি বেড ভাগ করে আরো দুই রোগীর সাথে ৭ মাসের শিশু মিরাজকে নিয়ে ভর্তি আছেন মান্দারি ইউনিয়নের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, গত ১০দিন ধরে বাড়িতে কোমর সমান পানিবন্দি আছি। টয়লেট ও ডোবার নোংরা ময়লা বন্যার পানিতে সব একাকার। এতে আমার ৭ মাসের ছেলের জ্বর, ঠাণ্ডা আর ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতালে এসে আরো বিপদে পড়েছি। শত-শত মানুষের মধ্যে থেকে সন্তানের সাথে আমরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

একই কথা বলেন পৌর শহর থেকে শিশু কন্যা তাসুকে নিয়ে ভর্তি দিনমুজুর খোকন। তিনি বলেন বন্যার পানি পচে চারদিকে ডায়রিয়াসহ নানান অসুখ দেখা দিয়েছে। আমার ১০ বছরের মেয়ের ডায়রিয়ায় খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও স্যালাইন সহ সব ওষধই বাহিরের ফার্মেসী থেকে কিনতে হচ্ছে। কিছু বললে নার্সরা বলে ঔষধ নাই কোথা থেকে দিবো?

চর লরেন্স থেকে আসা সামছুন নাহার, সদরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে আসা ইমনসহ কয়েকজন রোগীর স্বজনরা জানান, জায়গাই পাচ্ছেন না তারা। তবুও চলাচলের স্থানে বিছানা পেতে আছে, ময়লা দূর্গন্ধ আর রোগীর ভীড়ে খুই খারাপ অবস্থা। চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। সরকারি হাসপাতালের এমন অবস্থা আগে কখনো দেখেন নি বলে অভিযোগ করেন তারা।

ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ লিলু রানী দাস বলেন, গত তিন দিনে ৩ শতাধিক ডায়রিয়া ও জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে। যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে তারা সবাই বন্যাক্রান্ত এলাকার। গত তিন দিনে গণ হারে ডায়রিয়া, জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। কোন বেডই খালি নেই, মেঝেতেও হাটার জায়গা নেই। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, হাসপাতালে,  কলেরা স্যালাইন, এন্টিবায়োটিক,সালবিউটামল, হিস্টাসিন ও ডায়রিয়ার ওষধের তীব্র সংকট। যেতুটু ছিলো সব রোগিদের সমহারে বন্টন হচ্ছে। রোগীরা এখন বাহির থেকে ঔষধ কিনতেচ্ছে। উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এদিকে জেলার ৫টি উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রে গুলোতে ডায়রিয়া, জ্বরসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেডিকেল টিমের কর্মীরা চিকিৎসা সেবা দিলেও তা অপর্যাপ্ত। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লক্ষীপুরে আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দাসহ স্থানিয়রা।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, বন্যার কারণে ডায়রিয়াসহ চারদিকে পানি বাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু থেকে আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬৪টি মেডিকেল টিমের সদস্যরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছ। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ায় কলেরার স্যালাইনসহ ওষধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্য স্যালাইনসহ ঔষধ সরবরাহ করা হলে সংকট নিরসন হবে বলেও জানান তিনি।