মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ঢাকা-নেপিদো: ইস্যু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
- আপডেট সময় : ১০:২৩:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১৯ বার পড়া হয়েছে
মোঃ হাসানুজ্জামান সিনিয়র রিপোর্টার:রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বা রোহিঙ্গা ইস্যু বহুল আলোচিত একটি বিষয়। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে তাদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ও এদেশের জনগণ উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। অমানবিক এই নির্যাতনের কোনো বিচার না করে, বহির্বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয় যে, অতিশীঘ্রই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তাদেরকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হচ্ছে না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে বিশ্ব মোড়লেরা এই মুসলিম সম্প্রদায়টিকে নিয়ে তাদের তামাশা দেখিয়ে যাচ্ছে। একাধিকবার একাধিক দেশ ও সংস্থার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। এবার পুনরায় দুই দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক বসতে যাচ্ছে আগামীকাল।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মিয়ানমারের দিক থেকেও সম্মতি রয়েছে। সেই লক্ষ্যে আলোচনার জন্য এবার মিয়ানমারে মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ঢাকা-নেপিদো। আগামীকাল সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারে এ বৈঠক হতে যাচ্ছে।ঢাকা ও নেপিদোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চীনের মধ্যস্থতায় যেকোনো সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে রাজি আছে মিয়ানমার। তবে অতীত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় ভালো করে হিসাব-নিকাশ করেই প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় ঢাকা। মিয়ানমারে হতে যাওয়া মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকে শুরুতে কত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতে চায় নেপিদো, প্রত্যাবাসন শুরুর পর পরবর্তী ব্যাচ শুরুর প্রক্রিয়া এবং রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফেরার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের উদ্যোগ, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার আস্থা অর্জনের বিষয়ে জোর দেবে ঢাকা।
নেপিদোর একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ২ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে নেইপিদো গেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির। ৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যাবাসন শুরু করাসহ রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই নিয়ে আলোচনা করতে দুই দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ফিরতি সফরে তাদের রাখাইনে ফেরানো নিয়ে মনোবল বাড়াতে নেইপিদোর একটি প্রতিনিধিদলের কক্সবাজারে কবে নাগাদ আসবে, তা চূড়ান্ত হবে।
এদিকে ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, নির্বাচনের আগে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে চায় সরকার। এখনও নিশ্চিত করে বলা যাবে না, ঠিক কবে থেকে এটা শুরু হবে। মিয়ানমারে মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকের পর নেপিদোর একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার সফর করবে। যেসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় রাখাইনে যেতে চান, তাদের তালিকা চূড়ান্ত হলে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল এসে তার জন্য কাজ করবে। মূলকথা মনোবল বৃদ্ধি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। এ বৈঠক থেকে প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত হবে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না, এরপরও পর্যায়ক্রমে বৈঠক চলবে। এটা একটা প্রক্রিয়া।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, পাইলট প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন করার জন্য তালিকা করেছে সরকার। এদের মধ্য থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হলে প্রথম ব্যাচে হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একই পরিবার এবং এলাকার রোহিঙ্গাদের পাঠানোর পক্ষে।
ঢাকার জ্যৈষ্ঠ এক কূটনীতিক বলেন, চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা নিয়ে খুবই আন্তরিক। মিয়ানমারের আন্তরিকতা দেখে ইতিবাচক মনে হচ্ছে। তবে প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হবে। এর আগেও কিন্তু প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা করেও কিন্তু সফলতা আসেনি। সেজন্য আমাদের সতর্কতার সঙ্গে পা বাড়াতে হবে। প্রত্যাবাসন আমাদের মূল অগ্রাধিকার।
চীনের মধ্যস্থতায় গত চার থেকে পাঁচ মাসে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এসময়ে পশ্চিমা দেশ এবং সংস্থাগুলো প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। এতে করে বিব্রত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে ঢাকা। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখে দেওয়ার প্রস্তাব আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে। জবাবে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রাধিকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার প্রস্তাবে বাংলাদেশ কখনো রাজি হবে না। বরং যারা এ ধরণের প্রস্তাব দিচ্ছে, তাদের উচিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুতে ভূমিকা রাখা। তাছাড়া তারা তো চাইলে কিছু রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করতে পারে। এতে করে আমাদের ওপর থেকে কিছুটা চাপ কমতো।
উল্লেখ্য, চীনের ভূমিকায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সে উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়।
পরবর্তী সময়ে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালের আগস্টে দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন উদ্যোগও ব্যর্থ হয়। ওইসময় রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা জানায় রোহিঙ্গারা। ফিরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে তারা। সাত বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
চলতি বছর নতুন করে আবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে বেশ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে চীন। তারই অংশ হিসেবে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে কুনমিংয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে বৈঠক করেছে চীন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রোহিঙ্গাদের একটি দল নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রাখাইন সফর করবেন।