প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী নূর হোসাইন রাফি পড়াশুনা করতে চাই

- আপডেট সময় : ০১:২৩:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৪৩ বার পড়া হয়েছে

মোঃ ইব্রাহীম মিঞা,বিরামপুর দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী নূর হোসাইন রাফি পড়াশুনা করতে চাই। স্বপ্ন পূরণ করতে চাই বাক প্রতিবন্ধী বাবার। কিন্তু দুঃখের বিষয় ২ বছর আগে দু চোখে এই সুন্দর পৃথিবীকে দেখলেও এখন তার একটি চোখ চিকিৎসার অভাবে নষ্ট।তার ডান চোখটিতে খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়ে একটি ক্ষতের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ডান চোখটির মাংস বৃদ্ধি পেয়ে সামনে বেড়িয়ে এসেছে। এতে করে একটি চোখ দিয়ে দেখতে পেলেও অপর চোখটির যন্ত্রণা কাতরাচ্ছে সে। তার ডান চোখটির বিভৎস অবস্থা।তার এ অবস্থায় পুরো পরিবারটিকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিশু রাফির বিভৎস চোখটির চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে এসেছে বিরামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ পুরো প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার।
বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের বিনাইল গ্রামের বাক প্রতিবন্ধী নুরুজ্জামান সরকারের ছেলে নূর হোসাইন রাফি। নুরুজ্জামান সরকারের ৩ সন্তানের মধ্যে নূর হোসাইন রাফি (৫) সবার ছোট ছেলে সন্তান। অভাবের সংসারে প্রতিবেশীদের সাথে কৃষি কাজ করেন তিনি।অন্য দিকে এই সংসারে সহোযোগিতায় তার স্ত্রীও গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঝীয়ের কাজ করে সংসার চালায়। অভাবের সংসারে ছোট ছেলের ডান চোখের আঘাতের চিকিৎসা করতে ব্যর্থ হয় তাঁর পরিবার। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় একবার ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইন্সটিটিউট এন্ড হসপিটাল বাংলাদেশ এর চিকিৎসা সেবা নেন তার পরিবার।সে সময় শিশু রাফির নিউমোনিয়া হওয়ায় কিছু দিন পর তাকে নিয়ে আসতে বলে। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থাভাবে আর যাওয়া হয়নি তার। গ্রামে ফিরে এসে অর্থাভাবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যায় তার পরিবার। এভাবে কেটে যায় কয়েকটি বছর। বর্তমানে শিশু রাফির ডান চোখের বিভৎস চেহারায় দিশেহারা তাঁর অসহায় পরিবার।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থী শিশু রাফির বাড়িতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় একটি মশারির ভেতরে শুয়ে কাতরাচ্ছে সে। বিভৎস চোখটিতে মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য তাকে মশারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
শিশু রাফির মা শাপলা বিবি জানান,গত পাঁচ মাস আগে চোখটির অবস্থা এতটা বিভৎস ছিল না। আমার ছেলেটিকে বিনাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি করে দেয়। নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করে। ইদানিং তার ডান চোখের মাঝের মাংসটি বৃদ্ধি পেয়ে বিভৎস আঁকার ধারণ করে। সবসময় যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে আমার ছেলেটি।
বিনাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, শিশু রাফির চোখটির বিভৎস অবস্থা দেখে আমি বিরামপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনকে অবগত করি। শিশুটির পরিবারটি অসহায় সুচিকিৎসা পেলে শিশুটি স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্জন করতে পারবে।
পরবর্তীতে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন এর উদ্যোগে বিরামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুনা লায়লার আন্তরিক সহযোগিতায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার শিশুটির চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসেন। বিরামপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণের মাসিক সমন্বয় সভায় ১১৭ টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাসহ তার অফিসের অফিস সহকারীর সহোযোগিতায় শিশুটির চিকিৎসা ব্যায় নির্বাহ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, নূর হোসাইন রাফি আমাদের শিক্ষা পরিবারের সন্তান, আমাদের সন্তান। তার চিকিৎসা ঢাকার চক্ষু হাসপাতালে করানো হবে। প্রথমে তার ডান চোখের বৃদ্ধি পাওয়া মাংসটি অপারেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলা হবে। পরবর্তীতে উক্ত স্থানে পাথরের চোখ বসানো হবে বলে তিনি জানান।