মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর(দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের টাটকপুর গ্রামের পূর্ব মাঠে অগভীর নলকুপের পাশে সরিষার ক্ষেত থেকে তরিকুল ইসলাম (৪০) এর মৃত দেহ উদ্ধার করে প্রশাসনকে না জানিয়ে লাশ দাফনের ঘটনা ঘটেছে।
গত শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের টাটকপুর গ্রামের পূর্ব মাঠে আঃ খালেকের অগভীর নলকুপের পাশ থেকে মৃত দেহ উদ্ধার করে পুলিশকে অবহিত না করেই ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তড়িঘড়ি করে দাফন সম্পন্ন করেছে নিহতের পরিবার ও অগভীর নলকুপের মালিকসহ স্থানীয় লোকজন।ঘটনার বিষয়ে সরজমিনে গিয়ে জানাযায় নিহত তরিকুল টাটকপুর নয়াপাড়া মহল্লার অগভীর নলকুপের পানির লাইনম্যান ছিলেন।তাঁর স্ত্রী সবজান বিবি (৩৭) জানান, ২৬ জানুয়ারি বিকেল ৫টার পর বাড়িতে এসে খাবার খেয়ে কাজে যান। এরপর সারারাত আর ফিরে আসেননি। পরদিন সকালে প্রতিবেশিদের মুখে শোনেন তার স্বামী তরিকুল ইসলাম মৃত অবস্থায় আব্দুল খালেকের অগভীর নলকুপের পূর্ব পার্শে সরিষাক্ষেতে পড়ে রয়েছে। এ সংবাদ শুনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।এ বিষয়ে অগভীর নলকুপের মালিক আব্দুল খালেকের সাথে কথা বলতে গেলে, তাঁর বড় ছেলে সুমন হোসেন(৩৫) জানান, বাবা অসুস্থ কথা বলতে পারবেন না।খালেকের ছেলে সুমন হোসেন বলেন, মৃত তরিকুল বিগত ৮/১০ বছর ধরে আমাদের অগভীর নলকুপের পানির লাইনম্যান হিসেবে কাজ করে আসছেন। এসময় সুমনের মা ও বাবা বলেন, শুক্রবারে সকালে তরিকুল কাজে আসবেন না বলে জানিয়ে চলে যান। এর পর থেকে আর তাকে আমার গভীর নলকুপের কাছে দেখতে পাইনি। তারা আরও জানান, প্রতিবেশিদের নিয়ে তরিকুলের মৃত দেহ উদ্ধার করে প্রলিপ্রয়াগপুর ইউপি চেয়ারম্যান রহমত আলীকে অবগত করে। চেয়ারম্যান রহমত আলী ‘কি হবে তিনিই দেখবেন’ বলে আশস্ত করে মৃত দেহ দাফনের নির্দেশ দিলে আমরা থানায় অবগত না করেই প্রতিবেশিদের নিয়ে বাদ আসর দাফন সম্পন্ন করেছি।পরবর্তীতে পলিপ্রয়াগপুর ইউপি চেয়ারম্যান রহমত আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় বিরামপুর পল্লবী মোড়ে এসে সাংবাদিকদের সাথে মুখোমুখি দেখা করে লাশ দাফনের অনুমতির কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। মৃত তরিকুলের লাশ দেখে তার পরিবারকে বলেছি, কোন অভিযোগ থাকলে থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। একথা বলে আমি ঘটনাস্থল থেকে চলে এসেছি ।
অত্র গ্রামের নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, অগভীর নলকুপ মালিক আব্দুল খালেকও একজন মাদকসেবী। আব্দুল খালেকের অগভীর নলকুপ ঘরে দীর্ঘদিন ধরে তাসের জুয়া ও মাদকের আসর চলে আসছিল। ওর পাশেই ঘটনার দিন তরিকুল ইসলামের মৃত দেহ পড়ে থাকতে দেখে তাঁর মৃত্যুটি রহস্যজনক বলে মনে করছেন এলাকাবাসি। একজন মৃত ব্যক্তির লাশ মাঠের মধ্যে পড়ে থাকার বিষয়টি প্রশাসনকে না জানিয়ে দাফনের বিষয়টি সচেতন মহলের সন্দেহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে বিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুব্রত কুমার সরকারের সাথে কথা বললে, তিনি জানান, টাটকপুর মাঠের মধ্যে শনিবারে কোন মৃত ব্যক্তির লাশ পড়ে রয়েছে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ হয়নি বা পুলিশ অবগত নয়। তবে অভিযোগ বা এ সংক্রান্ত তথ্য পেলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তরিকুল ইসলামের মৃত্যুটিকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে এলাকার সর্বস্তরের সচেতন মহল মনে করছেন। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এলাকাবাসী।