ঢাকা ০৮:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo গাজীপুরে বিসিএস আনসার কর্মকর্তা ও রিক্রুট সিপাহিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত Logo ময়মনসিংহের ভালুকায় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-রাব্বানী ,সম্পাদক-আমির হোসেন। Logo ঢাকায় শিক্ষা ভবনে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে লক্ষীপুরে শিক্ষকদের মানববন্ধন Logo ময়মনসিংহ টু ত্রিশাল অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সার দাপট… Logo শ্রেণি পাঠদানে প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠ পরিকল্পনার অপরিহার্যতা Logo বাগমারায় শাহ সিমেন্টের পক্ষ থেকে নির্মাণ সাথী প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত Logo প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্কের গুরুত্ব Logo শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে সমাবেশ প্রতিবাদ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত Logo হারিয়ে যাওয়া শিশু সাদিককে পাঠানো হচ্ছে রাজশাহী বেবী হোমে  Logo শ্রীমঙ্গলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ

জীবন যুদ্ধে লিপ্ত একজন সংগ্রামী নারী নার্গিস বেগমের কথা

হাজী কাউছার, নবীনগর(ব্রাক্ষণবাড়িয়া)প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১২:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩ ১০০ বার পড়া হয়েছে

হাজী কাউছার
নবীনগর(ব্রাক্ষণবাড়িয়া)প্রতিনিধিঃ

জীবন সংগ্রামে লিপ্ত নবীনগর সদর বাজারের সবজি বিক্রেতা নারী নার্গিস বেগম ( ৩৩)। তিনি ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নবীনগর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত নাজিম উদ্দীন ও ফাতেমা বেগমের ৬ কন্যা সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান ।

ব্যক্তি জীবনে তিনি ১ পুত্র সন্তানের জননী। নাম সানী (১৬)। ২০০৪ সালে পিতার আকস্মিক মৃত্যুর ২ মাসের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী সদ্য বিবাহিত নার্গিস বেগম সংসারের হাল ধরেন।

পিতার মৃত্যুর ৩ মাস না পেরুতে স্বামী নার্গিস বেগমের পরিবারের প্রতি অপারগ থাকায় সদ্য জন্মানো শিশু সন্তান সানী, ৫ ছোট বোন ও মাকে নিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম।

নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিয়ে দিয়েছেন ৪ বোন শামসুন্নাহার বেগম, কামরুন্নাহার বেগম, বদরুন্নাহার বেগম, নাজমুন্নাহার বেগমকে।

সবার ছোট বোন আফরোজা বেগম এখন নবীনগর সরকারি কলেজে বিএ (সম্মান) পড়াশোনা করছেন।

পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ব্যবসায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে মা- বোন ও ১ ছেলে সন্তান নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

তিনি জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর মা – বোনদের টানে ১৭ বছর বয়সে কোলের শিশু সন্তান নিয়ে সবজি বিক্রি শুরু করি। এই দুর্বস্থার মধ্যে আমার স্বামীও আমাকে ছেড়ে চলে যায়।

দিশেহারা পরিবার ও স্বামীর আচরনে প্রথমে খারাপ লাগলেও আল্লাহর রহমতে সবার দোয়ায় ভাল আছি। আমাকে বাজারের অনন্য ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা করেন। সব সময় বিপদে-আপদে পাশে পাই তাদের।

আত্ম প্রত্যয়ী, লোক দেখানো সহানুভূতির ভয়ে নিভৃতে থাকা নার্গিস বেগম সহানুভূতি ও সাহায্যের বদলে কেবল সবার দোয়া চান।

পাশ্ববর্তী চা দোকানী মনিরুল ইসলাম বাবু জানান, দীর্ঘদিন ধরে নার্গিসকে দেখছি, তার মতো মেয়ে আর হয় না। মা-বোনদের কথা চিন্তা করে এমন ত্যাগ যেন ইতিহাস।

বাজারের মাংস ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, নার্গিস আপা আমাদের বাজারের প্রথম নারী ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে সুনাম ও সততার সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছেন তিনি।

পাশ্ববর্তী সবজি ব্যবসায়ী মোবারক মিয়া জানান, নার্গিসের মতো মেয়ে যেন সব পরিবারে জন্মায়। এমন মেয়ে পরিবারে থাকলে দুঃখ,কষ্ট পালাবে।

খন্দকার মিরাজুল ইসলাম মিরাজ বলেন, আমি সব সময় উনার কাছ থেকে প্রতিদিন বাজার সদাই করি। উনার ব্যবহার ও সততা আমাদের মুগ্ধ করে।

ঝর্না রানী নামে একজন ক্রেতা জানান, তার মতো মেয়ে আর হয় না। আমি সব সময় আমার ছেলে মেয়েদের তার (নার্গিস বেগম) কথা বলে অনুপ্রানীত করি, উৎসাহ দেই। সে নবীনগর তথা সারা বাংলাদেশের নারীদের জন্য আইডল।

নবীনগরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুরোধ করবো, নার্গিস বেগমকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য।

নার্গিস বেগমের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, একজন উদোগ্যক্তার জীবন সহজ ও সুন্দর নয়।

Translate »

জীবন যুদ্ধে লিপ্ত একজন সংগ্রামী নারী নার্গিস বেগমের কথা

আপডেট সময় : ১২:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩

হাজী কাউছার
নবীনগর(ব্রাক্ষণবাড়িয়া)প্রতিনিধিঃ

জীবন সংগ্রামে লিপ্ত নবীনগর সদর বাজারের সবজি বিক্রেতা নারী নার্গিস বেগম ( ৩৩)। তিনি ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নবীনগর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত নাজিম উদ্দীন ও ফাতেমা বেগমের ৬ কন্যা সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান ।

ব্যক্তি জীবনে তিনি ১ পুত্র সন্তানের জননী। নাম সানী (১৬)। ২০০৪ সালে পিতার আকস্মিক মৃত্যুর ২ মাসের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী সদ্য বিবাহিত নার্গিস বেগম সংসারের হাল ধরেন।

পিতার মৃত্যুর ৩ মাস না পেরুতে স্বামী নার্গিস বেগমের পরিবারের প্রতি অপারগ থাকায় সদ্য জন্মানো শিশু সন্তান সানী, ৫ ছোট বোন ও মাকে নিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম।

নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিয়ে দিয়েছেন ৪ বোন শামসুন্নাহার বেগম, কামরুন্নাহার বেগম, বদরুন্নাহার বেগম, নাজমুন্নাহার বেগমকে।

সবার ছোট বোন আফরোজা বেগম এখন নবীনগর সরকারি কলেজে বিএ (সম্মান) পড়াশোনা করছেন।

পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ব্যবসায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে মা- বোন ও ১ ছেলে সন্তান নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

তিনি জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর মা – বোনদের টানে ১৭ বছর বয়সে কোলের শিশু সন্তান নিয়ে সবজি বিক্রি শুরু করি। এই দুর্বস্থার মধ্যে আমার স্বামীও আমাকে ছেড়ে চলে যায়।

দিশেহারা পরিবার ও স্বামীর আচরনে প্রথমে খারাপ লাগলেও আল্লাহর রহমতে সবার দোয়ায় ভাল আছি। আমাকে বাজারের অনন্য ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা করেন। সব সময় বিপদে-আপদে পাশে পাই তাদের।

আত্ম প্রত্যয়ী, লোক দেখানো সহানুভূতির ভয়ে নিভৃতে থাকা নার্গিস বেগম সহানুভূতি ও সাহায্যের বদলে কেবল সবার দোয়া চান।

পাশ্ববর্তী চা দোকানী মনিরুল ইসলাম বাবু জানান, দীর্ঘদিন ধরে নার্গিসকে দেখছি, তার মতো মেয়ে আর হয় না। মা-বোনদের কথা চিন্তা করে এমন ত্যাগ যেন ইতিহাস।

বাজারের মাংস ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, নার্গিস আপা আমাদের বাজারের প্রথম নারী ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে সুনাম ও সততার সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছেন তিনি।

পাশ্ববর্তী সবজি ব্যবসায়ী মোবারক মিয়া জানান, নার্গিসের মতো মেয়ে যেন সব পরিবারে জন্মায়। এমন মেয়ে পরিবারে থাকলে দুঃখ,কষ্ট পালাবে।

খন্দকার মিরাজুল ইসলাম মিরাজ বলেন, আমি সব সময় উনার কাছ থেকে প্রতিদিন বাজার সদাই করি। উনার ব্যবহার ও সততা আমাদের মুগ্ধ করে।

ঝর্না রানী নামে একজন ক্রেতা জানান, তার মতো মেয়ে আর হয় না। আমি সব সময় আমার ছেলে মেয়েদের তার (নার্গিস বেগম) কথা বলে অনুপ্রানীত করি, উৎসাহ দেই। সে নবীনগর তথা সারা বাংলাদেশের নারীদের জন্য আইডল।

নবীনগরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুরোধ করবো, নার্গিস বেগমকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য।

নার্গিস বেগমের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, একজন উদোগ্যক্তার জীবন সহজ ও সুন্দর নয়।