তুষার আহম্মেদ
কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি:
গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বনের জমি রক্ষার প্রয়াসে বন বিভাগের কর্মকর্তারা এক ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে পড়েছেন। অবৈধ দখলদারদের একের পর এক আক্রমণে শুধু বন বিভাগের কাজই ব্যাহত হচ্ছে না, বরং কর্মীদের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে নেওয়া প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো একের পর এক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এবং অপরাধীদের আক্রমণাত্মক মনোভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে।অবৈধ দখলদারদের হামলার ভয়াবহতা সরকারি জমি রক্ষায় নিয়োজিত বন বিভাগের কর্মীরা বর্তমানে এক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের সাথে বাদ পড়ছে না সংবাদকর্মীর। অবৈধভাবে দখল হওয়া বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে হেনস্থার শিকার হতে হয় সংবাদ কর্মীদের। এছাড়াও ভূমিদস্যরা মুঠোফোনে বা চিরকুটের মাধ্যমে সংবাদ কর্মীদের হুমকি প্রদান করছে নিয়মিত। ইতোমধ্যে সংবাদকর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে রেখেছে এলাকায় প্রবেশ করলে প্রাণহানি ঘটিয়ে ফেলবে। সংবাদ কর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবার রয়েছে আতঙ্কে। স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না সংবাদ কর্মীদের সন্তানরা।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ভয়াবহ ঘটনার প্রেক্ষিতে জানা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার জাথালিয়া এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিতে গেলে বন কর্মীদের পথিমধ্যে ভূমিদস্যুদের দ্বারা নির্মম আক্রমণের শিকার হন। এই হামলায় দুজন বিট কর্মকর্তা এবং তিনজন প্রহরীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ভূমিদস্যদের এলোপাথারি আঘাতের কারণে গুরুতরভাবে আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলেও পরবর্তীতে গুরুতর অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেপিজি মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।একজন আহত বিট কর্মকর্তা বলেন, "আমাদের কাজের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। অবৈধ দখলদারদের আক্রমণ এতটাই নৃশংস যে, আমাদের নিজেদের জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিটি হামলা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত এবং ভয়াবহ।"বন বিভাগের জমির প্রতি আগ্রাসন এবং দখলের ক্রমবৃদ্ধিসচেতন মহল এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বনের জমি অবৈধভাবে দখল করার প্রবণতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে, ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী বন বিভাগের জমি দখল করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে লিপ্ত হয়েছে। দিন দিন জমির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং জনসংখ্যার চাপের ফলে স্থানীয় জনগণের পৈতৃক সম্পত্তি ছোট হয়ে আসছে, যা তাদের বন বিভাগের জমির উপর নির্ভর করতে বাধ্য করছে। ফলে, এই অঞ্চলে বেআইনি স্থাপনা নির্মাণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।অবৈধ স্থাপনা এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাবস্থানীয় সুশীল সমাজের মতে, অবৈধ দখলদাররা শুধু বন বিভাগের জমি দখল করে থেমে থাকছে না, তারা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বন উজাড় করে তারা আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তুলছে, যা স্থানীয় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য ভয়ানক বিপদ ডেকে আনছে। এছাড়াও, অবৈধ দখলদারদের কারণে বনের মূল্যবান বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে এবং সেই সাথে বন্যপ্রাণীর বাসস্থান হুমকির মুখে পড়েছে।প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া এবং আইনি পদক্ষেপ এ ধরনের আক্রমণের পর কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, "বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপর হওয়া হামলার বিষয়ে থানায় একাধিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। আমরা বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি এবং যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।" তবে, এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। সুশীল সমাজের উদ্বেগ এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রয়োজনস্থানীয় সুশীল সমাজ ও বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, যদি এভাবে অবৈধ দখলদারদের অপতৎপরতা অব্যাহত থাকে, তাহলে দেশের বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাবে এবং এই অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। ফলে, দেশীয় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব পড়বে।সুশীল সমাজের মতে, পরিবেশের সুরক্ষার জন্য এবং বন বিভাগের জমি রক্ষা করার জন্য সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
তারা আরও মনে করেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত।অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের গুরুত্ববন বিভাগের জমি রক্ষা এবং বন কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, আগামী দিনে এ ধরনের হামলা ও সহিংসতার প্রবণতা আরও বাড়তে পারে। ফলে, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে এবং বন উজাড়ের হারও বেড়ে যেতে পারে।গাজীপুরের বনাঞ্চল রক্ষায় বন বিভাগের কর্মীরা যে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তা কেবল তাদের জন্যই নয়, বরং জাতীয় পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকি। অবৈধ দখলদারদের আক্রমণ এবং তাদের কর্মকাণ্ড বন বিভাগের জমি ও কর্মীদের জীবনের উপর বিপর্যয় ডেকে আনছে। এ সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবী।