ঢাকা ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ভালুকায় অসহায় পঙ্গু যুবককে হুইল চেয়ার ও নগত অর্থ ও বাজার সামগ্রী উপহার দিলেন বিএনপি নেতা মোস্তাফিজ মামুন Logo ভোলা প্রেসক্লাবে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মত বিনিময়  Logo লক্ষীপুর জেলায় অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কৃষি খাতে প্রায় ২২৮ কোটি টাকার ক্ষতি Logo গাইবান্ধা জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন এর বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত Logo ভোলার সাবেক এমপি মুকুলের বিরুদ্ধে মামলা করলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা Logo ময়মনসিংহের সিএনজি অটোরিকশা চোরচক্রের ৬ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার… Logo গাজীপুরে বিসিএস আনসার কর্মকর্তা ও রিক্রুট সিপাহিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত Logo ময়মনসিংহের ভালুকায় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-রাব্বানী ,সম্পাদক-আমির হোসেন। Logo ঢাকায় শিক্ষা ভবনে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে লক্ষীপুরে শিক্ষকদের মানববন্ধন Logo ময়মনসিংহ টু ত্রিশাল অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সার দাপট…

উলিপুরে ধান সংগ্রহের উদ্বোধনীতে কৃষক নেই, বাছাই ছাত্রলীগ সভাপতিকে দিয়ে

আমীনুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১২:৫০:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪ ৪০ বার পড়া হয়েছে

আমীনুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার:

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বোরো ধান সংগ্রহে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন ও ধান সংগ্রহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতিকে দিয়ে অনলাইনে কৃষক নির্বাচনের এ লটারির উদ্বোধন করা হয়। অভিযোগ উঠেছে ধান সংগ্রহের উদ্বোধনী এ আনুষ্ঠানিকতায় ছিল না কোনো কৃষক।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিকে দিয়ে অনলাইনে কৃষক নির্বাচনের লটারির উদ্বোধন করা হয়। এরপর দুপুরে সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষক ছাড়াই ধান কেনা শুরু হয়। এদিকে লটারিতে নির্বাচিত নামের তালিকা প্রকাশ না করায় কৃষকদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান সংগ্রহে অনলাইনে কৃষক নির্বাচনের লটারির উদ্বোধন করা হয়। লটারিতে উপজেলার ৭৬০ কৃষক নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ৩৮০ ক্ষুদ্র কৃষক, ২২৮ জন মাঝারি কৃষক ও ১৫২ জন বড় কৃষক বাছাই করা হয়। এ মৌসুমে ৩২ টাকা কেজি দরে ২ হাজার ২৮০ মেট্রিকটন ধান ও ৪৫ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৩১১ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হবে।
এদিকে উপজেলা পরিষদে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের উপস্থিতি ছাড়াই অনলাইনে লটারি সম্পূর্ণ করা হয়। কৃষক নির্বাচনী লটারি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

দুপুরে সরকারি খাদ্যগুদামে ইউএনও উপস্থিতিতে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে সঙ্গে নিয়ে কৃষক ছাড়াই ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় লটারিতে নির্বাচিত ও প্রান্তিক পর্যায়ের কোনো কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হয়নি।

কৃষকদের অভিযোগ, শুরুতেই সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের আধিপত্য বিস্তারে প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের ধারণা প্রতি বোরো মৌসুমের মতো এ বছরের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৃষকদের বঞ্চিত করে নানা কৌশলে নিজেরাই গুদামে ধান দেবেন। এ কারণে কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সরকারের মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে লটারি হলেও অজ্ঞাত কারণে নির্বাচিত কৃষকদের নামের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম অনলাইনে কৃষক বাছাইয়ে লটারির সূচনা করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম। উপস্থিত সবাই আমাকে দিয়ে লটারির সূচনা করেছেন মাত্র।’

মিল চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি ও তবকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম রাজা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি শুধু চাল দিয়েছি। কোনো কৃষক ধান দিয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিসবাহুল হোসাইন সকালে ছাত্রলীগের সভাপতি মাধ্যমে অনলাইনে ধান সংগ্রহের লটারির উদ্বোধনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কোনো কৃষকের কাছ থেকে ধান নেওয়া হয়নি। নিয়ম রক্ষার জন্য সরকারি খাদ্য গুদামে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। এগুলো কোনো বিষয় না।’ লটারিতে নির্বাচিত কৃষকের তালিকা প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামী রোববার সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে এ তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’

উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও আতাউর রহমান বলেন, লটারির সময় কৃষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার দায়িত্ব খাদ্য বিভাগের। কেন তা করা হয়নি তা খতিয়ে দেখা হবে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কর্তৃক ধান ক্রয়ের উদ্বোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেখানে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Translate »

উলিপুরে ধান সংগ্রহের উদ্বোধনীতে কৃষক নেই, বাছাই ছাত্রলীগ সভাপতিকে দিয়ে

আপডেট সময় : ১২:৫০:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

আমীনুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার:

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বোরো ধান সংগ্রহে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন ও ধান সংগ্রহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতিকে দিয়ে অনলাইনে কৃষক নির্বাচনের এ লটারির উদ্বোধন করা হয়। অভিযোগ উঠেছে ধান সংগ্রহের উদ্বোধনী এ আনুষ্ঠানিকতায় ছিল না কোনো কৃষক।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিকে দিয়ে অনলাইনে কৃষক নির্বাচনের লটারির উদ্বোধন করা হয়। এরপর দুপুরে সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষক ছাড়াই ধান কেনা শুরু হয়। এদিকে লটারিতে নির্বাচিত নামের তালিকা প্রকাশ না করায় কৃষকদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান সংগ্রহে অনলাইনে কৃষক নির্বাচনের লটারির উদ্বোধন করা হয়। লটারিতে উপজেলার ৭৬০ কৃষক নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ৩৮০ ক্ষুদ্র কৃষক, ২২৮ জন মাঝারি কৃষক ও ১৫২ জন বড় কৃষক বাছাই করা হয়। এ মৌসুমে ৩২ টাকা কেজি দরে ২ হাজার ২৮০ মেট্রিকটন ধান ও ৪৫ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৩১১ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হবে।
এদিকে উপজেলা পরিষদে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের উপস্থিতি ছাড়াই অনলাইনে লটারি সম্পূর্ণ করা হয়। কৃষক নির্বাচনী লটারি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

দুপুরে সরকারি খাদ্যগুদামে ইউএনও উপস্থিতিতে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে সঙ্গে নিয়ে কৃষক ছাড়াই ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় লটারিতে নির্বাচিত ও প্রান্তিক পর্যায়ের কোনো কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হয়নি।

কৃষকদের অভিযোগ, শুরুতেই সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের আধিপত্য বিস্তারে প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের ধারণা প্রতি বোরো মৌসুমের মতো এ বছরের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৃষকদের বঞ্চিত করে নানা কৌশলে নিজেরাই গুদামে ধান দেবেন। এ কারণে কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সরকারের মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে লটারি হলেও অজ্ঞাত কারণে নির্বাচিত কৃষকদের নামের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম অনলাইনে কৃষক বাছাইয়ে লটারির সূচনা করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম। উপস্থিত সবাই আমাকে দিয়ে লটারির সূচনা করেছেন মাত্র।’

মিল চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি ও তবকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম রাজা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি শুধু চাল দিয়েছি। কোনো কৃষক ধান দিয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিসবাহুল হোসাইন সকালে ছাত্রলীগের সভাপতি মাধ্যমে অনলাইনে ধান সংগ্রহের লটারির উদ্বোধনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কোনো কৃষকের কাছ থেকে ধান নেওয়া হয়নি। নিয়ম রক্ষার জন্য সরকারি খাদ্য গুদামে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। এগুলো কোনো বিষয় না।’ লটারিতে নির্বাচিত কৃষকের তালিকা প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামী রোববার সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে এ তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’

উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও আতাউর রহমান বলেন, লটারির সময় কৃষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার দায়িত্ব খাদ্য বিভাগের। কেন তা করা হয়নি তা খতিয়ে দেখা হবে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কর্তৃক ধান ক্রয়ের উদ্বোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেখানে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’